স্কিৎসফ্রেনিয়া বনাম যাদু
এমন আওয়াজ শুনতে পান যা অন্য কেউ শুনতে পায় না?
জ্বীন ও যাদুর লক্ষন এর মধ্যে একটি লক্ষন হচ্ছে অসময়ে অকারনে এমন আওয়াজ শুনতে পাওয়া যা সাধারণত শুনার কথা না বা অন্য কেউ শুনতে পায়নি শুধু আপনিই শুনেছেন। বেশিরভাগ সময় কানের কাছেই এই আওয়াজ শুনতে পাওয়া। অজানা আওয়াজ শোনার যাদুর কিছু লক্ষণ ১। ভীতিজনক স্বপ্ন দেখা। ২। স্বপ্নে কাউকে ডাকতে দেখা। ৩। জাগ্রত অবস্থায় আওয়াজ শোনা অথচ কাউকে দেখতে না পাওয়া। ৪। ওয়াসওয়াসা বৃদ্ধি পাওয়া। ৫। নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের সম্পর্কে অতিমাত্রায় সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া। ৬ স্বপ্নে উচু স্থান থেকে নিচে পড়ে যেতে দেখা। ৭। স্বপ্লে ভয়ঙ্কর জন্তুকে দেখতে পাওয়া যা তাকে তাড়া করছে। ৮। কেনে ভিন্ন আওয়াজ হওয়া ক্রমাগত হতেই থাকে। ৯। ঘুম ঠিকমতো না হওয়া। এই প্রকার যাদু যেভাবে করা হয়ে থাকেঃ যাদুকর কোন জ্বিনকে এই কাজের দায়িত্ব অর্পণ করে থাকে যে, অমুক ব্যক্তিকে নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থায় ভীতিজনক কিছু দেখাও, অতঃপর সেই জিন নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্লের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর জন্তুর রূপ ধারণ করে ভীতি প্রদর্শন করে। আর কখনও জাগ্রত অবস্থায় ভীতিজনক আওয়াজে তাকে ডাকে। কখনও সেই কণ্ঠ পরিচিত মনে হয় কখনো অপরিচিত। এই যাদু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কখনও মানুষ পাগল হয়ে যায় আবার কখনও ওয়াসওয়াসা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে প্রতিক্রিয়া যাদুর শক্তি অনুযায়ী কম বা বেশি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে স্কিৎসফ্রেনিয়াও বলা হয় আমার কাছে ধর্মিয় ও বিজ্ঞানিয় ২ ব্যাক্ষাই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু কেউ কেউ দাবিই করে বসে এটা স্কিৎসফ্রেনিয়াই আবার কেউ কেউ বলে এটা জ্বীন ও যাদুর কারনেই হয়ে থাকে। আসলে স্কিৎসফ্রেনিয়া ব্যাধি আর ধর্মিয় বিশ্বাস (জ্বীন, যাদু) ব্যাধির মধ্যে পার্থক্য এতোটুকুই তা হলো বিশ্বাস আর অবিশ্বাস। এখন একটু বিশ্লেষণ করি এটা আদৌ জ্বীন ও যাদুর কারনে হয়ে থাকে কিনা। => হ্যা! জ্বীন ও যাদুর কারনে হয়ে থাকে। এটা ২ ভাবে ঘটে। ১) যাহেরি (প্রকাশিত) ২) বাতেনি (অপ্রকাশিত) যাহেরি=> যদি কোন জ্বীন মানুষের মাঝে নিজের বাসস্থান বা কোন এক স্থান জুড়ে নিজের আবাসস্থল গড়ে তুলে তখন সে বিভিন্ন ভাবে এক্টিভিটি যদি ঘরের মধ্যে বা ঐ স্থানে দেখায় বা করে থাকে তাহলে তা প্রকাশ্যে আসে এবং সকলেই তা উপলব্ধি করতে পারে। আর একেই বলা হয় যাহেরি ভাবে জ্বীন উপস্থিতি। বাতেনিঃ- এটা হচ্ছে এমন বিষয় যা শুধু ভিক্টিমই শুনতে পায় আর কেউ না। কারনঃ- কারন হচ্ছে জ্বীন ও যাদু টা আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে সেই আওয়াজ করছে আর তাই শুধু আপনিই শুনতে পাচ্ছেন আর কেউ না। الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ "যাকে শয়ত্বান স্পর্শ দ্বারা বেহুশ করে দেয়" আর স্পষ্ট হাদিস তো বর্ণনাই আছে জ্বীন মানুষের রক্তের সাথে মিশে যেতে সক্ষম।তাই আপনি যখন জ্বীন ও যাদুতে আক্রান্ত তাই আপনিই শুনতে পারছেন আর কেউ না। ধরেন আপনি আর আপনার ভাই/বোন একই বিছানায় ঘুমান, হঠাত আপনি শুনতে পেলেন কেউ বাইরের গেটে নক করে আপনাকে ডাকছে বা যে কাউকে ডাকছে বা ধাক্কাচ্ছে গেট খোলার জন্য আর এটা শুধু আপনিই শুনেছেন কিন্তু আপনার ভাই/বোন শুনতে পায়নি। এটা কিভাবে হলো? এটার কারন হচ্ছে এইটাই যে আপনি আক্রান্ত আর এই ক্ষমতা আল্লাহ শয়তান কে দিয়ে দিয়েছেন। মানুষের শরীরের ৪ স্থান হচ্ছে জ্বীন দের মূল বাসস্থান ১) মস্তিষ্ক, ২) বুক, ৩) লজ্জাস্থান, ৪) পেট তো জ্বীন যখন আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থান করে তখনই আপনাকে অনেক কিছু দেখাবে,শুনাবে, এবং ভাবাবে। চিকিৎসা -- এক্ষেত্রে কোন রাকির মাধ্যমে সরাসরি রুকইয়াহ করা, রুকইয়াহ করার সময় রুগী বেহুঁশ হতে পারে! যদি রুগী বেহুঁশ হয় আর জ্বিন হাজির হয় তাহলে রাকি তার পদ্ধতি অবলম্বন করবে। আর যদি রুগী বেহুঁশ না হয় তাহলে রুকইয়াহ শেষে বাড়িতে গিয়ে কি কি করা প্রয়োজন সেগুলো বলে দেওয়া।এবং যাদু নষ্টের জন্য চিকিৎসা দেওয়া। যেমনঃ - (১) ঘুমানোর পূর্বে ওযু করে নেওয়া এবং আয়াতুল কুরসী পড়া। (২) রোগী দু'হাত প্রার্থণার মত উঠাবে এবং সূরা নাস, সূরা ফালাক ও সূরা ইখলাস পড়ে দু'হাতে ফু দিবে এবং সমস্ত শরীর দু'হাতে স্পর্শ করবে এমনটি তিনবার করবে। (৩) সকালে সূরা সাফফাত পড়বে আর সূরা দুখান রাতে ঘুমানোর সময় পড়বে অথবা কমপক্ষে এই দু'টি সূরা শুনবে । ৪ । তিন দিন অন্তর অন্তর সূরা বাকারা পড়বে অথবা শুনবে। ৫। প্রত্যেকদিন সকাল-সন্ধ্যায় মাসনুন আমল গুলি গুরুত্ব দিয়ে করা ৬। প্রত্যেক দিন রাতে ঘুমানোর সময় সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে। ৭। শোয়ার সময় রোগী এই দু'আ পড়বেঃ بِسْمِ اللَّهِ وَضَعْتُ جَنْبِي ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ، وَأَخْسِئْ شَيْطَانِي ، وَفُكَّ رِهَانِي ، وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِيِّ الْأَعْلَى ৮। নিম্নের সূরাসমূহ রেকর্ড করে রোগীকে প্রত্যহ দিন কানে হেডফোন লাগিয়ে তিন বার করে শুনাবেঃ সূরা সফফাত, সুরা ফুসসিলাত, সূরা ফাতাহ, সূরা জ্বিন, সূরা দুখান। এখন প্রশ্ন আসে তাহলে কি স্কিৎসফ্রেনিয়া এর কোন বিষয়ই নাই এতে? আমি বলবো বিজ্ঞান হচ্ছে প্যারানরমাল বিষয়ে অবিশ্বাসি। এইসব ক্ষেত্রে ধর্মিয় ব্যখ্যা বা যৌক্তিকতা যতই থাকুক বিজ্ঞান তার লজিক ও থিওরি ঢুকিয়ে দিবেই দিবে। কিন্তু হ্যা মানুষিক রোগের কারনেও যে এমন টা হয়ে থাকে এই কথাকে ফেলে দেয়া মোটেও যাবে না। মানুষিক কারনেও হয়ে থাকে। কিছু ব্যাক্তি বর্গ আছে যারা এইধরনের রোগি দের দেখলেই বা কোন রাক্বির এমন রোগির সাথে ডিল হওয়া পোস্ট দেখলেই তাদের গা জালা শুরু হয় এবং বিজ্ঞান কে সামনে রেখে লাফাতে লাফাতে বলে এইটা রাক্বি দের ব্যাবসা একে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি ইহুদি নাসারা রা কিভাবে আমাদের ইসলামি চিকিৎসা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। অথচ, আল্লাহ কুরআন এর মধ্যে বলেছেন, তিনি আল্লাহ কুরআন কে নাযিল করেছেন বিশ্বাসী দের জন্য উত্তম চিকিৎসা ও রহমত হিসেবে। আর এরা এই কুরআনিক ট্রিটমেন্ট থেকেই মানুষ কে সরিয়ে নিচ্ছ এই বলে যে এটা রাক্বি দের ব্যাবসা। তারা এটাই জানে না একেকজন রাক্বি বা ইসলামিক চিকিৎসক ইসলামি চিকিৎসা বিদ্যার উপর গবেষণা করে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করে যেমন টা বিজ্ঞান দ্বারা গবেষনাকারি চিকিৎসক করে। একজন বিজ্ঞানিয় চিকিৎসক কি বিনে পয়সায় আপনার ট্রিটমেন্ট করে দেয়? তারও তো একটা ফি বা চার্জ আছে ঠিক রাক্বিদেরও। রাক্বি ও মেডি চিকিৎসক এর মধ্যে পার্থক্য এটাই যে একজন ইসলামি জ্ঞান ও গবেষনায় চিকিৎসক আরেকজন মেডিকেল ও সাইন্টিফিক গানে চিকিৎসক। আফসোস লাগে আবার হাসিও আসে যখন দেখি জ্বীন, যাদুর "জ,য" জানে না সেই ব্যাক্তি জ্বীন যাদুর সাথে সাইন্সের ব্যাক্ষা দিতে আসে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া অবস্থা হয়ে যায় তখন। আল্লাহ সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুক। আল্লাহ সবাইকে সমস্ত বালা মুসিবত, ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাযত করুক।
No comments