নফস
নফস সম্পর্কে কুরআনের কিছু কথা # (نَفْس)
আমরা অনেকে নেক আমল করতে চাই। কিন্তু পারি না। ফজরে নামাজ আদায়ের জন্য মোবাইলে এলার্ম দিয়েও উঠতে পারি না। যখন এলার্ম বেজে উঠে তখন কেটে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। পরে যখন ঘুম ভাঙে তখন দেখি সকাল ৮/৯ টা বেজে গেছে। যখন নামাজে দাঁড়াই তখন অলসতা চলে আসে, তাড়াহুড়া করে নামাজ শেষ করি। অথচ, যখন আমরা খোশগল্পে মত্ত হই তখন ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় কিন্তু কোনো হুঁশ থাকে না।
আমাদের খারাপ নফস/ আত্মা আমাদের নেক আমল থেকে বাঁধা দেয়। এই নফস চায় সবসময় তার রাজত্ব চলবে। অন্য কারো কথা সে মানতে চায় না। আপনি যদি তার ধোঁকায় পরে নেক আমল থেকে বিরত থাকেন তবে আপনি তার কাছে হেরে গেলেন।
নফস কী?
নফস বলা হয়, মানুষের কামনা, বাসনা, চাহিদা ইত্যাদি–কে৷ এক কথায় যাকে বলা হয় প্রবৃত্তি। আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির সময় তার স্বভাবে কতিপয় চাহিদা দান করেছেন। যেমন: আহারের চাহিদা, যৌবনের চাহিদা, কর্তৃত্বের চাহিদা, ক্ষমতার চাহিদা, লোভ-লালসা ইত্যাদি। সব গুলোকে এক কথায়, জৈবিক চাহিদা বলা যায়। আর এগুলোই হলো নফস বা প্রবৃত্তি।
নফস তিন ভাগে বিভক্ত:
১. নফসে আম্মারা (প্রতারক আত্মা)
২. নফসে লাওয়ামাহ (অনুশোচনাকারী আত্মা)
৩. নফসে মুতামায়িন্নাহ (প্রশান্ত আত্মা)
ক. নফসে আম্মারা: যা মানুষকে মন্দ কাজে প্ররোচিত করে অর্থাৎ যে নফস মানুষকে কুপ্রবৃত্তি ও জৈবিক কামনার দিকে আকৃষ্ট করে।
খ. নফসে লাওয়ামাহ: যে নফস অন্যায় করার পর মানুষের হৃদয়ে অনুশোচনার উদ্রেক করে।
গ. নফসে মুতামায়িন্নাহ: যে নফস সকল কালিমা থেকে মুক্ত এবং যাবতীয় মহৎ ভাবনায় পরিতৃপ্ত।
নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ১৫টি কৌশল!
--------------------------------------------
১. ফজরের পরে না ঘুমানোর অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে কাইলুলা (দুপুরের হালকা ঘুম) করা যাবে।
২. দিনে ম্যাক্সিমাম তিনবার খাবার অভ্যাস করুন। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝখানে হাবিজাবি খাবার- যেমন ফাস্টফুড, স্ট্রিটফুড খাওয়া যাবে না। ক্ষুধা লাগলে খেজুর, আপেল এগুলো খাওয়া যায়।
৩. প্রতিবেলা খাবার সময় যেটুকু খাবার যথেষ্ট বলে মনে হবে তার থেকে একটু কম খাবেন।
৪. অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো মন্তব্য করার আগে একবার চিন্তা করুন এই কথাটা আপনি না বললে কি কোনো লস আছে? বলা কি আবশ্যক? উত্তর না হলে; ওই কথা বলার দরকার নেই।
৫. সকাল-সন্ধ্যার জিকির-আজকার পাঠ করুন।
৬. ইশরাকের সালাত আদায়ের অভ্যাস করুন।
৭. প্রতিদিন নিয়মিত কোরআন পড়ার অভ্যাস করুন। হতে পারে ১ রুকু থেকে ১ পারা- যেকোনো পরিমাণ।
৮. ঘুমের পরিমাণ কমাতে হবে।
৯. ফজরের পরে কিছুক্ষণ ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। আর কিছু না পারলে ১৫-২০ মিনিট জগিং করে এসে গোসল করে ইশরাকের সালাত পড়ার অভ্যাস করা।
১০. দৃষ্টি অবনত রাখুন। না পারলে ওইসব জায়গা এড়িয়ে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
১১. ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার (সোশ্যাল মিডিয়া) কম ব্যবহার করা।
১২. প্রতিদিন হিফজের একটা টার্গেট নেওয়া। এটা প্রতিদিন এক আয়াতও হতে পারে। কিন্তু টার্গেট পুরা করতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১৩. বিশেষ করে রাতে ভরপেট খাওয়া পরিহার করতে হবে।
১৪. রাতে ঘুমানোর আগে অজু করে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে নিন এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকুন।
১৫. নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের অভ্যাস করুন।
ভাই/বোন,আপনি দু’আ করতে থাকুন আল্লাহর কাছে।ইনশা আল্লাহ্ , আপনার রব আপনাকে নিরাশ করবেন না ।
."আর তোমাদের রব বলেছেন , ‘তোমরা আমাকে ডাক , আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। ’ {সূরা আল-মু‘মিন , আয়াত : ৬০ }
যে কোনও মুহুর্তে আমার মৃত্যু আসতে পারে, এ বিশ্বাস অন্তরে মজবুত রাখা। গুনাহের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে কী ভয়াবহ পরিণতি হবে? এ ভয় সর্বদা অন্তরে জাগ্রত রাখা।
এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَىٰ فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَىٰ .
.
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (সূরা নাযিয়াত : ৪০-৪১)
ইনশাআল্লাহ, রাব্বে কারিম আপনার অন্তরকে প্রশান্ত করে দেবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা লেখার প্রতিটি কথার ওপর আমাদের সবাইকে এবং সঙ্গে আমাকেও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন
Collected
No comments